নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে অবস্থিত বজরা শাহী মসজিদ। জেলার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ২৮৩ পূর্বে নির্মিত এই মসজিদ।
মোঘল বাদশাহ মোহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে বজরার জায়গীরদার পারস্যর পীর মিয়া আম্বর শাহের নির্দেশে আমানুল্লাহ ও ছানাউল্যার ১৬ একর ৫৩ শতক জমিতে একটি দীঘি খনন করেন। দীঘি খননকালে সেখানে একটি গম্বুজ পাওয়া যায়। এতে করে এই স্থানে এর আগেও মসজিদ ছিল বলে ধারণা করা হয়েছিলো। দিঘির পশ্চিম পাড়ে দিল্লির শাহী জামে মসজিদের অনুকরণে ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে ২৫-২৬ বছর। বর্তমানে এই মসজিদটি বজরা শাহী মসজিদ নামে পরিচিত।
চারপাশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মসজিদে প্রবেশ করার পথটি পূর্ব দিকে। আয়তাকার মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে লম্বা। মসজিদের পূর্বে ৩টি, উত্তরে ও দক্ষিণে ১টি করে মোট ৫টি দরজা রয়েছে। মসজিদের পূর্বদিকের মধ্যের দরজায় একটি ফারসি ফলকে এর নির্মাণকাল ও নির্মাতার নাম লেখা রয়েছে। মসজিদের ভেতরের পশ্চিম দেয়ালে ৩টি মেহরাব অত্যন্ত কারুকার্যময়। মসজিদের চার কোণে ৪টি সুন্দর টাওয়ার রয়েছে যা এর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তুলেছে। বজরা শাহী মসজিদ নির্মাণে মোঘল স্থাপত্য রীতি অনুসরণ করা হয়। মসজিদের পূর্বদিকে আছে বিরাট তোরণ। তোরণের দোতলার ওপরে রয়েছে উঁচু মিনার। এর সৌন্দর্য ও অলংকরণের জন্য চীন দেশীয় গ্লাস কেটে মসজিদের গায়ে লাগানো হয়।
১৯০৯ সালে আমান উল্যার বংশধর বজরার জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মৌলভী মুজির উদ্দিন আহমেদ মসজিদটি ১৮ বছরধরে ব্যাপকভাবে মেরামত করেছিলেন এবং সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সজ্জিত করেছিলেন।
এই মসজিদটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান। ঢাকা-নোয়াখালী মহাসড়কের সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পার্শ্ব রাস্তা দিয়ে পশ্চিমে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে মসজিদটির অবস্থান।
২৯ নভেম্বর ১৯৯৮ থেকে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বজরা শাহী মসজিদের ঐতিহ্য রক্ষা এবং দুর্লভ নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণের জন্য কাজ করছে।