হ্যাঁ, পেয়েছি! ওর স্কুলে যাবার কথা বলে মনে করিয়ে দিলো। উঠে দাঁড়িয়ে বললাম।
" ইরা। "
" ইশ, কত সুন্দর করে ইরা বলেন! আমার বুক টা কেঁপে উঠে কেমন। "
" আচ্ছা কাঁপাকাঁপি বাদ দাও। একটা কথা শুনো। এটাই তোমার জন্য একমাত্র শর্ত। আগের গুলো সব বাদ। এটা পারলে এই উদয় শুধু তোমার। আর না পারলে কোনোদিন আমার নাম ও মুখে আনতে পারবে না। "
ইরা মনোযোগী হয়ে দাঁড়ালো।
" তাড়াতাড়ি বলেন না। "
" তোমার ক্লাস রুল কত? "
ও যেন লজ্জায় পড়ে গেলো।
" ইয়ে আসলে আমি ছাত্রী হিসেবে একদমই দুর্বল। "
" আমি জানি একশো ছাত্রীর মধ্যে তোমার রোল সাতাত্তর। তুমি যদি সেভেনে তোমার রুল দশের ভিতরে আনতে পারো তাহলে আমি তোমার অর্ধেক হয়ে যাবো। মানে তোমার বোনের সাথে বিচ্ছেদের দাগ টানবো। আর তারপর যদি জে, এস, সি'তে এ প্লাস পাও তাহলে আমি তোমার প্রস্থাবে রাজি। মোটকথা তোমাকে অষ্টম শ্রেণীতে এ প্লাস পেতে হবে। আশা করি তুমি পারবে। তোমার মধ্যে একটা কিছু আছে। তোমার দ্বারা হবে। শুভকামনা রইলো। "
মেয়েটার মাথায় যেন চিড়িৎ চিড়িৎ করে বিদ্যুৎ এর বাজ পরলো। মাথা ঘুরে পরে যাবে মনে হয়। আমি ওর সামনে থেকে চলে আসার সময় ও যেন আমাকে বিড়বিড় করে কী বলছে। আমি পাত্তা না দিয়ে বাড়িতে ফিরে আনিকাকে ফোন দিচ্ছি।
হঠাৎ ফোন টা ধরলো।
" বাড়িতে মেহমান এসেছে অনেক। কী বলবে তাড়াতাড়ি বলো। "
"তোমার বোন তো আমার জন্য পাগল হয়ে গেছে পুরো। "
" খেয়েদেয়ে কোনো কাজ নেই তো। এজন্য তোমার মতো একটা পাগলের পিছনে ঘুরে পাগলী হচ্ছে। "
" তোমার হিংসে হয় না? "
" হিংসে হওয়ার কী আছে? ছোট মানুষ। কিছুই বুঝে না। আবেগে ওসব বলে। বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে। "
" পরে বুঝিয়ো কিন্তু "
" আজাইরা প্যাঁচাল পারতে ফোন দিছো? রাখো তো "
অতঃপর টুঁট টুঁট টুঁট।
আনিকা ব্যাপারটাকে গায়েই লাগাচ্ছে না। যাক গে। যার ভাতের ভাগ বসাচ্ছে তাঁর খোঁজ না থাকলে আমি আর কী? তবে ইরা মেয়ে টা মনে হয় না আর আমার সামনে দাঁড়াবে। কারণ বালিকার মাথায় সব ঢুকলে ও লেখাপড়া ঢুকে না।
মধ্যরাত হঠাৎ আনিকার ফোন!
আনিকা সাধারণত রাতে ফোন দিতে পারে না। কারণ দু'বোন এক সাথে ঘুমায়। ইরার যন্ত্রণায় ও কথা বলতে পারে না। আমার কাছে ব্যাপার টা পানির উপরে ফুটবল খেলার মতোই।
"ঘুমাচ্ছো? জানো আজকে না একটা বিশাল ঘটনা ঘটছে আমাদের বাসায়। "
" তার আগে বলো তুমি এখন ফোন দিলে কীভাবে? ইরা কোথায়? "
" আরে বাবা সেটা বলার জন্যই তো ফোন দিয়েছি। শুনো দশ'টার সময় ঘুমাতে যাওয়ার সময় দেখি ইরা পড়ার টেবিলে! ভাবলাম বেচারি মনে হয় আজকে স্যারের দ্বারা কঠিনভাবে অপমানিত হয়েছে। তাই পড়তে বসেছে। একটু আগে আমার ঘুম ভাঙলো। এখন রাত প্রায় দেড়'টা বাজে। এখনো সে পড়ছে, ভাবা যায়? "
আমি মনে মনে বললাম, আল্লাহ্ বলে কী!