সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ নেতা আলফেরদৌস আলফা গ্রেফতার

সাতক্ষীরার কুখ্যাত চোরাকারবারি ও আওয়ামী লীগ নেতা আলফেরদৌস আলফাকে গ্রেফতার করেছে পুুলিশ।

ছবি: আল ফেরদৌস আলফা

বুধবার (২৭ নভেম্বর) বিকেলে দেবহাটা থানার একটি চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত চোরাকারবারি আলফেরদৌস আলফা দেবহাটা উপজেলার উত্তর কোমরপুর গ্রামের আবুল কাশেম সরদারের ছেলে। 

তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও উপজেলা পরিষদের সর্বশেষ চেয়ারম্যান। তিনি জেলাব্যাপী সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের পোষ্যপুত্র হিসেবে পরিচিত। সকলের সামনে নজরুল ইসলাম আল ফেরদৌস ওরফে আলফাকে বাপজান বলে সম্বোধন করে ডাকতেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত একজন শীর্ষ চোরাকারবারিকে বাপজান বলে সম্বোধন করায় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বেশ আলোচিত সমালোচিত ছিল।

দেবহাটা থানার ওসি হযরত আলী জানান, যৌথবাহিনীর সদস্যরা আলফাকে তার কোমরপুর গ্রামের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার বিকেলে দেবহাটা থানার একটি চাঁদাবাজি ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

সাতক্ষীরার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দেবহাটা জিআরও অফিস সূত্র জানা যায়, বুধবার বিকেলে সাতক্ষীরার আমলি আদালত ৭ আলফাকে হাজির পরে দেবহাটা থানা-পুলিশ। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসা করার জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে আলফাকে কারাগারে পাঠনোর নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, আলফেরদৌস আলফা খুব ছোট বেলা থেকেই চোরাচালানের সাথে জড়িত। চোরাকারবারিদের কুলি থেকে কোটিপতি বনে যাওয়ার পর আলফাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সাতক্ষীরা জেলা সহ দেশের বিভিন্ন জেলার কুখ্যাত চোরাকারবারীদের সাথে নেটওয়ার্ক স্থাপন করে চুটিয়ে চালাতে থাকে তার অবৈধ কারবার। বিশেষ করে আওয়ামী সরকারের আমলে আলফা হয়ে উঠে বেপরোয়া। তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক এমপি প্রয়াত মুনসুর আহমেদের পালিত পুত্র বনে যাওয়া আলফা ধরাকে সরাজ্ঞান করতে থাকে। নিজ এলাকাসহ জেলায় গড়ে তোলে চোরাকারবারীদের সিন্ডিকেট।

এক সময় সাধারণ সদস্য হিসেবে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ.ফ.ম রুহুল হকের হাত ধরে ২০১৮ সালে প্রাথমিক সদস্য হিসেবে নাম লেখায় আওয়ামী লীগের খাতায়। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার এমপি, মন্ত্রিদের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের নেত্রী সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি লায়লা পারভীন সেজুতিকে বড় বোন বলে সম্বোধন করতেন। দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরে আল ফেরদৌস আলফা শপথ নিয়ে প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও সাবেক এমপি সেজুতিকে সাথে নিয়ে তিনি উপজেলা পরিষদের প্রথম কার্যদিবস পালন করেন এবং তাদের আশীর্বাদ নিয়ে জেলা পরিষদের চেয়ারে বসেন।

শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের কিছুদিন আগে বিপুল পরিমাণ ফেনসিডিল সহ সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন আল ফেরদৌস আলফা। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় সোনা চোরাচালানসহ বিভিন্ন চোরাকারবারীর একাধিক মামলা রয়েছে।