এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত বেতন বিহীন ও চরম বৈষম্যের স্বীকার শিক্ষকদের এমপিও পদে স্থানান্তরের জন্য সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার ৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
প্রভাষক মোঃ সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন, মোছাঃ মমতাজ বেগম , মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ জামাল হোকছিম, মোঃ লুৎফার রহমান, মোঃ রুকুনুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমরা শিক্ষক নিবন্ধন পরিক্ষায় পাল করে জাতীয় মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেছি সেই জাতীয় মেধা তালিকা হতে ১ম, ২য়, ৩য় গণ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিপত্রের আলোকে এনটিআরসিএ মাধ্যমে আবেদন করি এবং উক্ত আবেদন গুলো যাচাই বাচাই করিয়া এমপিও এবং নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের লক্ষ্যে এনটিআরসিএ সুপারিশ করেন। সুপারিশের পর হতেই একই পরিপত্রের আলোকে নিয়োগ পেয়ে কিছু শিক্ষক বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন বিন্তু ঐ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেলে বেতন ভাতা পাবেনা এ ধরণের কোন নির্দেশ ছিল না এবং মাত্র ১০৭ জন শিক্ষক বেতন ভাতা না পেয়ে বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমাদের অনেকেই ৪০০-৬০০ কি. মি. দূরে যোগদান করে নিজ খরচে গেয়ে পড়ে প্রায় ৮ বছর যাবত পাঠদান করে আসছেন। এনটিআরসিএ এর প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। এনটিআরসিএ গঠন হওয়ার পর হতে এ পর্যন্ত ৫ টি গণবিজ্ঞপ্তি হয়েছে। ১ম, ২য় ও ৩য় গনবিজ্ঞপ্তিতে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হলেও ৪র্থ ও ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। যার ফলে আমরা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করি এবং যোগদান করিয়া অদ্যবধি বেতন ভাতা ছাড়াই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।
বক্তারা বলেন, প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে আমাদের নিজ উপজেলার বাহিরে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হলেও উপজেলা কোটা থাকার কারণে যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থী হয়েও নিজ উপজেলায় এমপিও পদে যোগদান করার সুযোগ পাই নি। অথচ কম যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীগণ উপজেলা কোটায় নিয়োগ পেয়েছে এবং বেতন ভাতাসহ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন।
বক্তারা বলেন, প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে অধিকাংশ শূন্য পদের বিপরীতে এমপিও উল্লেখ করা ছিল। যোগদান করার পর আমরা জানতে পারি ঐ পদ গুলো নন-এমপিও। ফলে আমরা বেতন ভাতা না পেয়ে আদালতের স্মরণাপন্ন হই এবং রিট করি। বিচারক মহোদয় আমাদের কাগজপত্রাণী পর্যালোচনা করে যোগদানের দিন থেকে বেতন ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য রায় প্রদান করেন। কিন্তু বিগত সরকার সেই রায়কে কার্যকর না করে মহামান্য হাইকোর্টকে অবমাননা করেন।
বক্তারা বলেন, এনটিআরসিএ হতে আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর জানতে পারি প্রতিষ্ঠান নন-এমপিও। তাৎক্ষনিক আমরা এনটিআরসিএ অফিসে যোগাযোগ করলে চেয়ারম্যান মহোদয় ও কর্মকর্তাবৃন্দ আমাদেরকে বেতন ভাতা পাবেন বলে নিশ্চয়তা দেন এবং যথারীতি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। এরপর আমরা দীর্ঘদিন চাকুরি করলেও বেতন ভাতাদির কোন ব্যবস্থা না হওয়াতে আবারও এনটিআরসিএ অফিসে যোগাযোগ করি। তারা আমাদের কথা বলার সুযোগ দেয় না এবং গেটের মধ্যে প্রবেশ করতে না দিয়ে চলে যেতে বলেন। এরপর আমরা অসংখ্য বার এনটিআরসিএ, মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বার বার আমরা স্মারকলিপি দেওয়ার পরও কোন সমাধান খুজে না পেয়ে আজ আমরা নিরুপায়। আমরা সচিবালয়ে, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব মহোদয়ের এবং সিনিয়র সচিব মহোদয়ের সাথে, ডিজি মহোদয়ের সাথে বার বার দেখা করি। উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করলেও তারা আমাদের পেটের ক্ষুধা মেটানোর কোন ব্যবস্থা না করে আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন এবং এক দপ্তর অন্য দপ্তরের উপর দায়ভার চাপিয়ে নিজেরা দায় সারেন।
বক্তারা বলেন, আবেদনের ক্ষেত্রে প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে ১৮০/- টাকা করে ফি প্রদান করে আবেদন করতে হত। অর্থাভাবে আমাদের অনেকেই একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে ব্যর্থ হই। এছাড়াও ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে বয়স ৩৫ বছর নির্ধারণ করায় অধিক পদ শুন্য থাকা সত্বেও আমরা আবেদন করতে ব্যর্থ হই। আমরা মানুষ গড়ার কারিগর হয়েও সকল দপ্তর হতে আশাহত হয়ে ফিরে আসি। মানুষ গড়ার কারিগর এই শিক্ষকদের সাথে কেন এই বৈষম্যমূলক আচরণ তা আমাদের বোধগম্য নয়। কেনইবা আমাদের এই বোবাকান্না কেউ শুনতে চায় না, কেনইবা আমাদের সরকারি ভাবে নিয়োগ পেয়েও অদ্যবধি বিনাবেতনে চাকরি করতে হচ্ছে। আমরা দীর্ঘ্যদিন বেতন ভাতাদি না পেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এতে আমরা যেমন সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছি তেমনি মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়ছি।
বক্তারা আরও বলেন, এমতাবস্থায় মানবেতর জীবন থেকে রক্ষার্থে মাত্র ১০৭ জন শিক্ষককে এমপিও পদে স্থানান্তরের মাধ্যমে বেতন ভাতাদি নিশ্চিত করার জন্য প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা সহ সকল উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করছি। অন্যথায় আমাদের আত্মহত্যা ছাড়া কোন উপায় নেই। আর এই দায়ভার নিতে হবে শিক্ষা সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষের।