এখানে আপনার পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দিন।

ঢাকা ২৩ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার

ব্রেকিং

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি: বাংলাদেশর সকল জেলায় জেলা প্রতিনিধি, উপজেলা প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি পদে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহী প্রার্থীগণ নিউজ সাইটের যোগাযোগ অংশে প্রদত্ত ঠিকানায় (ফোন, ইমেইল) যোগাযোগ করুন।

আহসান হাবিব সোহেল

প্রকাশিত: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:০২

আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১৪:০২

৪৯১

শেয়ার:

শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে "সচেতন নাগরিক সমাজের" বিবৃতি প্রদান

বুধবার ২ অক্টোবর বেলা ১২ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের আকরাম খাঁ হলে শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যপুস্তক নিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছেন "সচেতন নাগরিক সমাজ"।

News

উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে নানা ধরণের সংস্কার কার্যক্রম চলমান। সেই সংস্কার ঢেউ লেগেছে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও। শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ অনুযায়ী প্রণীত পাঠ্যপুস্তকগুলো নিয়ে জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই কারিকুলাম, শিখন পদ্ধতি এবং পাঠ্যপুস্তক নিয়ে প্রতিবাদ আসে ইসলামপন্থী, সেকুলার সব মহল থেকেই। পাঠ্যপুস্তকের অনেক কনটেন্টই ইসলামের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক ছিলো। ইতিহাসে ছিলো অখন্ড ভারতের বয়ান। তাছাড়া মুসলিম শাসন আমলকে সচেতনভাবে বিকৃত ও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টাও পরিলক্ষিত হয়। এছাড়া শিল্প ও সংস্কৃতি বইটা বাধ্যতামূলক করার মাধ্যমে, মুসলিম সন্তানদের নাচগানে বাধ্য করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। অন্যদিকে সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস এবং সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের শরিফার গল্প তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। এই গল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় বিকৃত পশ্চিমা এলজিবিটি মতাদর্শের প্রবেশ ঘটে। আলেম উলামা এবং ইসলামপন্থী জনতার তীব্র প্রতিবাদের মুখে বিগত সরকার বাধ্য হয় গল্পটি অপসারণের সিদ্ধান্ত নিতে।

বক্তারা বলেন, গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে সেটা নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনা চলছিলো। শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর আলোকে লেখা পাঠ্যপুস্তকগুলো থাকছে না জেনে প্রাথমিকভাবে জনমনে স্বস্তি ফিরে আসে। সিদ্ধান্ত হয় ২০১২ এর পাঠ্যপুস্তকগুলো সংশোধিত এবং পরিমার্জিত হয়ে বাজারে আসবে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পাঠ্যপুস্তক সমন্বয় কমিটি জনসম্মুখে প্রকাশ হবার পর থেকে আবারও বিতর্ক শুরু হয়। এই কমিটি কিভাবে হলো এটা নিয়ে অনেক সংশয় এবং সন্দেহ তৈরি হয়েছে। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এই কমিটিতে কোন শিক্ষাবিদ, কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ বা পেডাগোজি স্পেশালিষ্ট ছিলেন না। এই কমিটিতে উপেক্ষিত ছিলো আন্দোলন অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন অংশীজনদের প্রতিনিধি। আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি কমিটির কয়েকজন সদস্য এলজিবিটি মতাদর্শের সমর্থক এবং গভীর ইসলামবিদ্বেষ লালন করেন। এই কমিটির বিতর্কিত ব্যক্তিদের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধনসহ নানা ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। আমরাও সচেতন নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে গত ২৬/০৯/২৪ ইং তারিখে প্রেসক্লাবের সামনে এই কমিটির দুইজন সদস্য অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন এবং ড. সামিনা লুৎফাকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন করি। এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিটির এই দুইজন সদস্যের এলজিবিটি মতাদর্শকে প্রোমোট করা বিভিন্ন পোস্ট ভাইরাল হয়। এই মানববন্ধন থেকে আমরা পরবর্তী কারিকুলাম কমিটিতে ইসলামপন্থী শিক্ষাবিদ রাখারও দাবি জানাই।

বক্তারা বলেন, গত ২৮শে সেপ্টেম্বর সরকার পাঠ্যপুস্তক সমন্বয় কমিটি বাতিল করেন। আমরা চিহ্নিত ইসলামবিদ্বেষী ও সমকামিতার সাপোর্টারদের অপসারণ চাইলেও সরকার তড়িঘড়ি করে পুরো কমিটি কেন বাতিল করলেন তা বোধগম্য নয়। তবে এই ঘটনাকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জমান স্বার্থান্বেষী মৌলবাদী হুমকির কাছে সরকারের নতি স্বীকার বলে অবিহিত করেন। আমরা ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের স্বার্থান্বেষী মৌলবাদী জনগোষ্ঠী বলে অপমান করার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা টিআইবিকে পতিত স্বৈরাচারের শাসনামলে সরকারের জুলুমের সাথে আপোষ করতে দেখেছি বারবার। ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীকে এভাবে কটাক্ষ করাটা একটা ফ্যাসিবাদি আচরণ। আমরা টিআইবির নির্বাহী পরিচালককে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহবান জানাচ্ছি। আবু সাঈদের রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশের সাথে টিআইবির এ ধরনের ইসলামবিদ্বেষ মানানসই নয়। আবু সাঈদসহ আন্দোলনের বহু শহীদ ইসলামের চেতনা লালন করতেন। এই চেতনাকে দূরে ঠেলে দেবার একটা ফ্যাসিবাদি প্রচেষ্টা আমরা লক্ষ্য করছি।

বক্তারা আরও বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে জানা গেছে, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ শেষের দিকে এবং অক্টোবর মাসেই বই প্রেসে যাবার পরিকল্পনা আছে। তবে নতুন বই কেমন হবে তা নিয়েও ধর্মপ্রাণ জনগণের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। যেহেতু, এলজিবিটি মতাদর্শের সমর্থক কিছু মানুষও এই পাঠ্যপুস্তকের কাজ করেছেন, শব্দের মারপ্যাচে এলজিবিটি মতাদর্শের কোন কন্টেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাছাড়া ইসলাম শিক্ষা বইয়ের কাজ করেছেন আবু সাঈদ খান নামক একজন ঘোষিত হাদিস অস্বীকারকারী। এ নিয়েও গণপরিসরে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে।এই বাস্তবতায়, ধর্ম উপদেষ্টার নেতৃত্বে শিক্ষাবিদদের উপযুক্ত টিম কতৃক পাঠ্যপুস্তকগুলো রিভিউ করা জরুরি, যারা ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংবেদনশীল যে কোনো বিষয়বস্তু চিহ্নিত করবেন এবং সংশোধন করবেন, প্রয়োজনে বাদ দেবেন। গতবার এলজিবিটি মতাদর্শ ঢুকেছিলো ইতিহাস ও সমাজবিজ্ঞান সাবজেক্টের মাধ্যমে। এবার সেটা নিয়ে কাজ করছেন এই মতাদর্শের কট্টর সমর্থক ড. সামিনা লুৎফা এবং তার টিম। তাই সঙ্গত কারণেই বইগুলো রিভিউ করা জরুরি। আপত্তিকর আলোচনাসহ বইগুলো বাজারে আসলে তীব্র আন্দোলন তৈরি হবার সম্ভাবনা আছে, যেটা সরকারের স্থিতিশীল হবার পথে প্রতিবন্ধক হতে পারে। তাছাড়া বই ছাপানোর পর বাতিল করতে হলে সরকারের কোটি কোটি টাকা গচ্চাও যাবে। ফলে, বইগুলো আগেই রিভিউ করা হলে অনেক জটিলতা এড়ানো যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

বিদ্যমান বাস্তবতায় আমরা নিন্মলিখিত পাঁচ দফা দাবি পেশ করছি,

১। পাঠ্যপুস্তক চূড়ান্ত এবং ছাপানোর আগে তা অবশ্যই একদল শিক্ষাবিদের দ্বারা পর্যালোচনা করাতে হবে যারা ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে সংবেদনশীল যে কোনো বিষয়বস্তু চিহ্নিত করবেন এবং সংশোধন করবেন, প্রয়োজনে বাদ দেবেন। এই টীমে অবশ্যই আলিমদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

২। পাঠ্যপুস্তকে এমন কোনো ভিনদেশী মতাদর্শ প্রচার করা যাবে না যা দেশের সাংস্কৃতিক, নৈতিক এবং ঈমানী মূল্যবোধের সাথে বিরোধপূর্ণ। বিশেষ করে এলজিবিটি এবং জেন্ডার আইডিওলজিসহ ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক কোন কনটেন্ট বইতে থাকা যাবে না।

৩। পাঠ্যপুস্তক থেকে অখন্ড ভারতের বয়ান বাদ দিয়ে সঠিক ইতিহাস তুলে আনতে হবে। ইতিহাস পাঠে অবশ্যই মুসলিম শাসনের সোনালী ইতিহাস ও অবদানের আলোচনা নিশ্চিত করতে হবে, যা পূর্বে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে।

৪। কিসের ভিত্তিতে এই সমন্বয় কমিটি এবং সংশোধন ও পরিমার্জন টিম গঠিত হলো ও সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হল, এবং কেন সেখানে কোন শিক্ষাবিদ ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞ নেই সেটা জাতির কাছে স্পষ্ট করতে হবে।

৫। গনমানুষের চাহিদাকে আমলে নিয়ে নতুন কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতির প্রতিফলন থাকতে হবে।

একই সাথে আমরা আরেকটি বিষয় যুক্ত করতে চাই। আমরা টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামানের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ভবিষ্যতে এধরণের বক্তব্যকে জনপরিসরে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা এবং ইসলামবিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গণ্য করা হবে।

উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, আব্দুল হাই মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ, মাওলানা মুফতি সাইফুল ইসলাম (সভাপতি), ডাঃ মেহেদী হাসান, প্রফেসর মুখতার আহমেদ, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, লুৎফর রহমান ফরায়েজি, সাইমুম সাদী, রেজাউল করিম আবরার, শরিফ আবু হায়াত অপুসহ প্রমূখ।



বিবৃতি শিক্ষা

মন্তব্য করুন-

বাংলাদেশর সকল জেলায় জেলা প্রতিনিধি, উপজেলা প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি পদে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহী প্রার্থীগণ নিন্মোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।

নাম: আহসান হাবিব সোহেল
মোবাইল: ০১৭১২২৩১৩৯০
ইমেইল: doinikvoreraloi@gmail.com