"বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ" এর ৭ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
আজ মঙ্গলবার ২০ আগষ্ট সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে বাংলাদেশ সরকারী কর্মচারী দাবী আদায় ঐক্য পরিষদের ৭ দফা দাবীবাস্তবায়নে অন্তর্বতীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মোঃ ইউনুস মাহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের বেতন ও পদ বৈষম্য তুলে ধরেন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে মোঃ মাহমুদুল হাসানের সঞ্চালনায় এবং মুখ্য সমন্বয়ক, জনাব ওয়ারেছ আলীর সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য রাখেন মোঃ ছালজার রহমান, সমন্বয়ক ও মহাসচিব, বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণী সরকারি সমিতি, কেন্দ্রীয় কমিটি।
সমন্বয়ক ও মহাসচিব ছালজার রহমান বলেন, আমাদের সংগঠনের ব্যানারে ২০১৯ সন থেকে সংবাদ সম্মেলন, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন, বিভাগীয় সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। সর্বশেষ ২৬ মে ২০১৩ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এতদ্বসময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের বেতন বৃদ্ধির বিষয় বক্তব্য প্রধান করা ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও পরর্বতীতে মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এর সাথে বেতন বৃদ্ধি ও ভাতাদির অসংগতি দূরকরণ ও বৈষম্যহীন ৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য পে-কমিশন গঠন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ৫০% মহার্থ ভাতা প্রদানের লক্ষে আশ্বাসমূলক আলোচনা হয়। উক্ত আশ্বাসের প্রেক্ষিতে মহাসমাবেশে কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। কিন্তু আমাদের বেতন-ভাতাদি বৃদ্ধির সকল আশাকে নিরাশায় পরিণত করে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ৫টি বিশেষ সুবিধা প্রদান করা হয়। সরকারের এ ঘোষণায় প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিরা চরমভাবে হতাশ ও ক্ষুদ্ধ। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ৫% বিশেষ সুবিধা বর্তমান বাজার ব্যবস্থার সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাছাড়াও আমাদের সংগঠনের দাবি ছিল কর্মচারি অংগনে পদ ও বেতন বৈষম্য দূর করা। কিন্তু তা না হয়ে প্রদেয় ৫ % বিশেষ সুবিধায় ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের বৈষম্য আরও বৃদ্ধি হয়েছে। ১১-২০ গ্রেডের অধিকাংশ কর্মচারিদের মূল বেতন ২০,০০০/-(বিশ হাজার) টাকার নীচে, তাদের আগামী ৪/৫ বছরেও বিশেষ সুবিধা সর্বনিম্ন ১০০০/-(এক হাজার) টাকার উর্দ্ধে উঠবে না। অথচ ১ম-৯ম গ্রেডের কর্মচারিদের এ সুবিধা চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পেতে থাকবে। আমরা এ ধরণের বিশেষ সুবিধা চাইনি। আমরা চেয়েছি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিদের মূল বেতন বৃদ্ধি। যাতে কর্মচারিরা পরবর্তীতে এর সুবিধা পেতে পারে। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও পরর্বতীতে মন্ত্রী মো: ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী কর্মচারিদের আতাদি বৃদ্ধি করা হবে, সে প্রত্যাশারও কোন প্রতিফলন ঘটেনি। তৎকালীন সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ৫% বিশেষ সুবিধা পুনঃবিবেচনা করে বর্তমান সময়ে বাজারমূল্যের লাগাহীন চরম উর্দ্ধগতি ও মুদ্রাস্ফীতির সাথে সংগতি রেখে ২০% বেতন বৃদ্ধি করে তা মূল বেতনের সাথে সংযোজন ও সকল ভাতাদি যুগোপযোগী করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ জানিয়েও কোন ফল পাইনি।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মো: ইউনুস তাঁর ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে গ্রামীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে এ দেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। সকল শ্রেণী পেশার মানুষের প্রত্যাশা পূরণে প্রধান উপদেষ্টা দেশের অত্যান্ত ক্রান্তিকালীন সময় অন্তর্বতীকবলীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারিরা আশান্বিত হই। আমাদের আত্মবিশ্বাস দেশের সকল সেক্টরের মত কর্মচারি অংগনের বৈষম্য নিরসণ করতে সক্ষম হবেন। দ্রব্য-মূল্যের লাগামহীন উদ্ধোগতি ও পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যয়ভার বহন করা প্রাপ্ত বেতনের অর্থ দিয়ে মাসের ১৫ দিনও চলা সম্ভব হয় না। ৫ বছর পর পর পে-স্কেল প্রদানের প্রথা চালু থাকলেও ২০১৫ সালের ৮ম পে-স্কেল প্রদানের পর দীর্ঘ ৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও অদ্যাবধি বেতন বৃদ্ধি না হওয়ায় কর্মচারি চরম দুরাবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। অত্যান্ত পরিতাপের বিষয় যেখানে গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারি ভাইদের বেতন ২০২৩ সালে ৮,০০০/- থেকে উন্নীত করে ১২,৫০০/- করা হয়েছে পক্ষান্তরে সরকারি কর্মচারীদের সর্বনিম্ন গ্রেডে ৮২৫০/- টাকা যা অতান্ত অমানবিক বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যায়ে কর্মচারিদের ৯ম পে-স্কেলসহ ভাতাদির অসংগতি দূর করা, পদ ও বেতন বৈষ্যম্য দূর করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। একইসাথে অনতিবিলম্বে সকল দপ্তর অধিদপ্তরের কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন করে বেতন ও পদবী বৈষম্য দূর করে কর্মচারি অংগনের বৈধ্যম্য নিরসনসহ ২০১৫ সালের ৮ম পে-স্কেলের কর্মচারিদের হরণ করা ৩টি টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড পূনর্বহালসহ প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারিদের এক ও অভিন্ন নিয়োগ বিধি বাস্তবায়ন করার জন্য প্রধান উপদেষটার কাছে জোর দাবি জানানো হয়।
৭ দফা দাবীনামাসমূহঃ
১. পে-কমিশন গঠন পূর্বক বৈষম্যহীন ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষে পে-কমিশন গঠন করতে হবে। লেপ-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্ব পর্যাপ্ত অর্ধতি কীন সময়ের জ ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করতে হবে। ইতোমধ্যে যে সকল কর্মচারী মূলবেতনের শেষ ধাপে উন্নীত হয়েছে তাদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি নিয়মিত করতে হবে। বেতন স্কেলের বৈষম্য নিরসনের জন্য ১০ ধাপে বেতন স্কেলে নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখতে হবে।
২. সচিবালয়ের ১৯৯৫ সালের জারীকৃত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সকল দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রধান সহকারী, উচ্চমান সহকারী হিসাব রক্ষক এবং সাঁটলিপিকারসহ সমপদগুলির পদবী ও গ্রেড পরিবর্তন করে যথাক্রমে প্রশাসনিক কর্মকর্তা/ব্যক্তিগত কর্মকর্তা নামকরণসহ ১০ আমে উন্নীত করতে হবে।
৩. ২০১৫ সালে ৮ম পে-স্কেলের গেজেটে হরণকৃত ৩টি টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পূণর্বহালসহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পুনঃবহাল এবং সকল হয়তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাচ্যুইটির পাশাপাশি পেনশন প্রবর্তনসহ বিদ্যমান গ্রাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
৪. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপীল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি-২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০১২ আমে উন্নীতকরণ। আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিলপূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে আত্মীকরণ করতে হবে।
৫. ব্লক পোষ্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে, অধস্তন আদালতের কর্মচারীদের বিচার বিভাগীয় কর্মচারী হিসেবে গণ্য করতে হবে, এছাড়া টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের টেকনিক্যাল পদ মর্যাদা দিতে হবে।
৬. বাজারমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির বিষয় বিবেচনা করে দেয় সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ, ১১-২০ গ্রেডের রেশন ব্যবস্থার প্রর্বতন করতে হবে। চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে।
৭. উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের প্রকল্পের চাকুরীকাল গণনা করে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান করার অবকাশ নেই মর্মে নং-অম/অবি (বাস্ত-৪)/বিবিধ-২০ (উঃখেঃ/০৭/৪৭, তারিখ-২৪-০৩-২০০৮খ্রি. যোগে অর্থ মন্ত্রণালয় হতে জারীকৃত বৈষম্যমূলক আদেশ বাতিল করতে হবে।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ লুৎফর রহমান, সভাপতি-১১-২০ গ্রেড সরকারি চাকুরীজীবি ফোরাম, আনোয়ারুল ইসলাম তোতা, সমন্বয়ক ও সভাপতি- বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, আনিছুর রহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ, আসমা খানম, সভাপতি, প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, রফিকুল আলম, সভাপতি, ১৭-২০ সরকারি কর্মচারী সমিতি, জনাব শাহ মোহাম্মদ মামুন, সভাপতি-বিচার বিভাগীয় কর্মচারী এসোসিয়েশন, খায়ের আহম্মেদ মজুমদার, সমন্বয়ক ও সেক্রেটারী- বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশন, জনাব মোঃ গাজীউল হক চৌধুরী, সমন্বয়ক ও সেক্রেটারী, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, রবিউল ইসলাম, সমন্বয়ক, বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ, মোঃ শাহজাহান সিরাজ, সাধারণ সম্পাদক, ১৭-২০ সরকারি কর্মচারী সমিতি, রায়হান উদ্দিন চৌধুরী, কার্যকরী সভাপতি, বাংলাদেশ তৃতীয় শ্রেণী সরকারি কর্মচারী সমিতি নিম্নে উল্লিখিত সহ সমন্বয়কবৃন্দ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন- শফিকুর রহমান, মোহাম্মদ আলী, আফরোজ আলী মোল্লা, আবুল কালাম আজাদ, সাউদ নূর এ শফিউল কাদের, আব্দুর রাজ্জাক, রফিকুল ইসলাম মামুন, তরিকুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, মাহবুব হক তালুকদার, কায়সার হোসেন, সারোয়ার হোসেন তালুকদার, আব্দুল মালেক, সেলিম রেজা, মিজানুর রহমান, মোঃ হেলাল উদ্দিন, শেখ সাদী খান, মোঃ আব্দুর রহিম, মোঃ মনিরুল ইসলাম (ফেডারেশন), মনির হোসেন বাবু, রবিউল ইসলাম, আব্দুল হালিম, টি.এম জাকির হোসেন, মনিরুল ইসলাম (৩য় শ্রেণী), নূর মোহাম্মদ, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মৌসুমী প্রধান, আশিকুল ইসলাম, শেখ মোঃ রাসেল, রাশেদুল আলম, রায়হান মিয়া, আঃ লতিফ গাজী,শফিকুল ইসলাম, আশফাকুল আশেকিন, ফরিদ আহমেদ সরদার, শাহীনুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।