হঠাৎ করেই চৈত্রের ভ্যাপসা গরমে বরগুনায় ব্যাপকহারে বাড়তে শুরু করেছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। এর প্রভাব পড়েছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে।
বরগুনায় ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন এতটাই বাড়ছে যে, হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ভেতরে পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা না পেয়ে রোগীকে বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। চিকিৎসক সংকটে রোগীদের সামলাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ বিভাগ।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় ২৭জন রোগী আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়া বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে বাড়ি গেছেন ১৯ জন। এর মধ্যে অনেকেই নারী ও শিশু। বর্তমানে মোট ভর্তি আছে ৪০জন।
গত একমাসে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। এপ্রিলের প্রথম দিকে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। আজ শুক্রবার সারাদিনে নতুন করে ১৩ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে জেনারেল হাসপাতালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বেড না পেয়ে ওয়ার্ডের মেঝে ও হাসপাতালের বারান্দায় তাদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চাপ, বেড সংকট ও ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। অনেকে আবার বারান্দার মেঝেতেও জায়গা না পেয়ে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মেঝের নোংরা ও অপরচ্ছিন্ন পরিবেশে গাদাগাদি করে অবস্থান নিতে হয়েছে তাদের। এতে রোগী ও স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে পোহাচ্ছে।
চিকিৎসাধীন অনেক রোগীরা জানান, বেড না থাকায় ফ্লোরে নোংরা পরিবেশে আমাদের অবস্থান নিতে হয়েছে।
আয়লা-পাতাকাটা থেকে হাসান আলী নামে এক শিশুর হাসপাতালের বারান্দায় হয়েছে ঠাঁই। হাসানের বাবা শিমুল বলেন, হাসানের হঠাৎ করেই পাতলা পায়খানা শুরু হয়। ডায়রিয়া হয়ে ফ্যাকাশে ও পানিশূন্য হয়ে পড়ছে শরীর। পরে বাধ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হলো।
আফিফা নামে এক নারীর অভিভাবক বলেন, ২৪ ঘণ্টায় তিনটি স্যালাইন দেওয়া হয়েছে । তবুও কমেনি। বারান্দা থেকে বাথরুমে স্যালাইনের স্ট্যান্ড ধরেই একটু পর পর নিয়ে যেতে হচ্ছে তাকে। একটি বেড পেলে হয়তো সে কিছুটা ভোগান্তি কমতো। কিন্তু হাসপাতালে ডাইরিয়ার রোগী কমছেই না, বরং আরও বেড়েই চলছে।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্তাবধায়ক (আবাসিক) সোহরাব উদ্দীন বলেন, এমনিতেই হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই, বেড সংকট। এ অবস্থায় হঠাত অধিক সংখ্যক রোগী ভর্তি হওয়ায় আমারা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীদের সু-চিকিৎসা প্রধান করতে।
বরগুনার সাস্থ বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ফজলুল হক জানান, গরমের মৌসুম শুরু হওয়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপকূলের প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা অতটা স্বাস্থ সচেতন নয়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকার কারণে রোগ জীবানুর আক্রমনের শিকার হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। অপরদিকে আমাদের ম্যানপাওয়ার কম থাকায় আমাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা অন্যান্য রোগীদেরও সেবা নিশ্চিতের লক্ষে আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করছি।