এখানে আপনার পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দিন।

ঢাকা ২৭ এপ্রিল ২০২৪ শনিবার

ব্রেকিং

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি: বাংলাদেশর সকল জেলায় জেলা প্রতিনিধি, উপজেলা প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি পদে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহী প্রার্থীগণ নিউজ সাইটের যোগাযোগ অংশে প্রদত্ত ঠিকানায় (ফোন, ইমেইল) যোগাযোগ করুন।

বদিউল আলম, উলিপুর প্রতিনিধিঃ

প্রকাশিত: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৯:২৩

আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২, ১৯:২৩

৪৬ ৭৮৩

শেয়ার:

কোরআন-হাদিসের আলোকে সেহরি ও ইফতারের বিধান

আরবী ৯ম মাসে রমজান পালন করা হয়। এই মাস মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের মাস।

News

পবিত্র মাহে রমজানের প্রতিটি দিনের সূচনা হয় সেহরির মাধ্যমে। আর সমাপ্তি হয় ইফতারের মাধ্যমে।

রমজানের রোজা ও তারাবির পাশাপাশি আরো যে উপলক্ষ ও ইবাদত মুসলিম সমাজকে ব্যাপকভাবে স্পর্শ করে তা হলো সেহরি ও ইফতার। রোজার প্রস্তুতি ঘোষণা করতে হয় সেহরির মাধ্যমে এবং সমাপ্তি ঘোষণা করতে হয় ইফতারের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআন-হাদিসের আলোকে সেহরি ও ইফতার সম্পর্কে পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-


সেহরির বিধান :

রোজা রাখার উদ্দেশ্য মুসলমানরা সুবহে সাদিকের আগে সেহরি খেয়ে থাকেন। রোজা পালনের জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নাত ও অধিক পুণ্যের কাজ। ক্ষুধা না থাকলেও সামান্য একটু পানি পান করাকেও সেহরি হিসেবে গণ্য করা হয়। সেহরি খাওয়ার মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহর অনুসরণ করা হয়। অন্যদিকে সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে রোজা রাখার শক্তি অর্জিত হয়। সেহরি খেলে রোজাদার সহজে দুর্বল ও মনোবলহীন হয়ে পড়েন না, সারাদিন দীর্ঘ সময়ের উপবাস বা অনাহারে থাকলেও কর্মঠ থাকার প্রাণশক্তি আসে এবং সিয়াম পালন সহ্যসীমার মধ্যে থাকে।

যতক্ষণ পর্যন্ত সুবহে সাদিক না হয় অর্থাৎ পূর্ব দিগন্তে সাদা বর্ণ না দেখা যায়, ততক্ষণ পর্যন্ত সেহরি খাওয়ার অনুমতি আছে। সুবহে সাদিক হয়ে গেলে তারপর আর কিছু খাওয়া-দাওয়ার সুযোগ নেই। সেহরি খাওয়ার সময়সীমা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,


সূরাঃ আল-বাকারা [2:187]


أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ ٱلصِّيَامِ ٱلرَّفَثُ إِلَىٰ نِسَآئِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ ٱللَّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتَانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ فَٱلْـَٰٔنَ بَٰشِرُوهُنَّ وَٱبْتَغُوا۟ مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَكُمْ وَكُلُوا۟ وَٱشْرَبُوا۟ حَتَّىٰ يَتَبَيَّنَ لَكُمُ ٱلْخَيْطُ ٱلْأَبْيَضُ مِنَ ٱلْخَيْطِ ٱلْأَسْوَدِ مِنَ ٱلْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّوا۟ ٱلصِّيَامَ إِلَى ٱلَّيْلِ وَلَا تُبَٰشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَٰكِفُونَ فِى ٱلْمَسَٰجِدِ تِلْكَ حُدُودُ ٱللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ ءَايَٰتِهِۦ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরন কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে। আয়াত: ১৮৭)।

রাসূল (সা.) সেহরি খেতে আদেশ করেছেন। বুখারী ও মুসলিম শরিফে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।’ রাসূল (সা.) কখনো সেহরি থেকে বিরত থাকতেন না। সাহাবায়ে কেরামকেও সেহরির ব্যাপারে তাগিদ দিতেন এবং নিজের সঙ্গে শরিক করতেন।

রাসূল (সা.) এর কাছে একজন সাহাবি এলেন যখন তিনি সেহরি খাচ্ছিলেন। রাসূল (সা.) তাকে দেখে বললেন, এ খাবার বরকতের। আল্লাহ পাক বিশেষভাবে তোমাদের তা দান করেছেন। কাজেই তোমরা সেহরি খাওয়া ছেড়ে দিও না। (নাসাঈ)।

মুসলিম শরিফে হজরত আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেছেন, আমাদের এ সিয়াম ও আহলে কিতাবদের (ইহুদী ও খৃষ্টান) রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সেহরি খাওয়া।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেসব মুসলমান ভোর রাতের এ সময়ে জেগে আল্লাহ পাকের হুকুম মেনে সেহরি খেতে বসে, আল্লাহ পাক খুশি হয়ে তাদের জন্য বিশেষ রহমত অবতীর্ণ করেন এবং মহান আল্লাহর ফেরেশতারা সেহরি গ্রহণকারীদের জন্য বিশেষ দোয়া করতে থাকেন। (মুসনাদে আহমদ)।

সেহরি খাওয়ার উত্তম সময়ও নির্দিষ্ট করা আছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা রাতের অন্ধকার প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত পানাহার কর।’ (সূরা বাকারা-১৮৭)।

দেশ ও অঞ্চলভেদে সেহরিতে খাবারের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবুও রাসূল (সা.) সেহরির সময় খেজুরকে সর্বোত্তম খাদ্যদ্রব্য বলেছেন। আবু দাঊদ শরিফে এক বর্ণনায়- খেজুরকে সর্বোত্তম সেহরি বলেছেন রাসূল (সা.)। এজন্য সেহরির সময় দু-একটি খেজুর খেলে এ সুন্নত আদায় হবে। এ ছাড়া আধুনিককালের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান মতে, খেজুরের ভেতর যে শক্তি ও পুষ্টিগুণ রয়েছে তা রোজাদারের জন্য অনেক বেশি শক্তিদায়ক এবং বিশেষ উপকারী।

অনেকে তারাবির পর খানা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন, অলসতা করে সেহরি খাওয়ার জন্য পুনরায় জাগ্রত হওয়াকে বোঝা মনে করেন তাদের জেনে রাখা দরকার যে, এটা সুন্নতের পরিপন্থী কাজ। এতে সেহরির ফজিলত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। সেহরির সময় একটু আগেভাগে উঠে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা বড় সৌভাগ্যের বিষয়। সেহরি খাওয়ার পর রোজার নিয়ত অন্তরে করাই যথেষ্ট, মুখেও যদি বলে তাহলে ভালো ‘আমি আগামীকাল রমজান মাসের রোজা রাখার নিয়ত করলাম’।

সেহরির মধ্যে বিলম্ব করা মুস্তাহাব। সেহরি খাওয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব করার অর্থ হলো, ততক্ষণ পর্যন্ত পানাহার করা বৈধ যতক্ষণ শুভ্র রেখা উদিত না হয়। যখন শুভ্র রেখা উদিত হয়ে যায় তখন পানাহার বর্জন করা চাই।

বর্তমানে আমাদের দেশের আবহাওয়া দফতর থেকে সেহরি ও ইফতারের সঠিক সময় আগেই ঘোষণা করা হয়ে থাকে এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনরাও সেই সময়সূচি অনুসরণ করে আজান দিয়ে থাকেন। ওলামায়ে কেরামের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্কতা হিসেবে প্রয়োজনের সামান্য আগ-পাছ করা হয়।


ইফতারের বিধান :

রোজা পালনে ইফতারের গুরুত্বও অপরিসীম। আবার সময়মতো ইফতার করার মধ্যেও রয়েছে অশেষ সওয়াব ও কল্যাণ। রাসূলে করিম (সা.) এরশাদ করেন, তোমরা ইফতারের সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে নাও। এতটুকু বিলম্ব করো না। এ সম্পর্কে তিরমিজি শরিফে উল্লেখ আছে যে, আমি ওই ব্যক্তিকে সর্বাধিক ভালোবাসি যে ইফতারের সময় হওয়ামাত্র ইফতার করে নেয়। আবু দাউদ শরিফে আছে, হজরত রাসূলে পাক (সা.) যখন ইফতার করতেন, তখন বলতেন, আমার তৃষ্ণা নিবৃত্ত, আমার শিরা উপশিরা সিক্ত হয়েছে এবং আল্লাহপাক পরওয়ারদেগারের পুরস্কার নির্ধারিত হয়ে গেছে।

হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘মানুষ ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতদিন তারা ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করে নেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

ইফতারের সময় এ দোয়া পড়তে হয়, ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! তোমার জন্যই রোজা পালন করলাম, আর তোমার প্রদত্ত রিজিক দিয়েই ইফতার করছি।’

রাসূলুল্লাহ (সা.) কয়েকটি তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। তাজা খেজুর না পেলে শুকনো খেজুর, অর্থাৎ খোরমা দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি তাও না পেতেন, তাহলে কয়েক ঢোক পানি পান করে নিতেন। এ ছাড়া ইফতারের আগ মুহূর্তটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম সময়। হুজুর পাক (সা.) বলেছেন, ‘ইফতার করার সময় রোজাদারের দোয়া কবুল হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ)।

বিদায় হজের ভাষণে রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছিলেন, ‘দাস-দাসীদের প্রতি সর্বদা সদ্ব্যবহার করবে। তাদের ওপর কোনোরকম অত্যাচার করবে না। তোমরা যা খাবে তাদেরও তাই খাওয়াবে; যা পরবে তাই পরাবে। ভুলে যেও না তারাও তোমাদেরই মতো মানুষ।’ অতএব, আমরা যখন ঘরে ইফতার করি তখন যেন বাসার গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নিয়ে পরিবারের সবাই একসঙ্গে ইফতার করি। কোনো রোজাদারকে ইফতার করানো অত্যধিক ফজিলতের কারণ।

সময়মত ইফতার করা যেমন ফজিলতের তেমনি রোজাদারকে ইফতার করানোর ফজিলতও অনেক। হজরত সালমান ফারসী (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে। ওই রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে, তবে ওই রোজাদারের সওয়াবে কোনো কম করা হবে না। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! আমরা সবাই রোজাদারকে ইফতার করাতে সক্ষম নই।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, পানি মিশ্রিত এক চুমুক দুধ বা একটি শুকনো খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারাও যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে আল্লাহ তাকে এ পরিমাণ সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তভাবে খানা খাওয়াবে আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজ (হাউজে কাওসার) হতে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্বে তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (বায়হাকী ওয়াবুল ঈমান, মেশকাত)। 

(আল্লাহ তায়ালা যেন সকলকে ঈমান ও ইহতিসাবের সহিত রোযা রাখার তৌফিক দান করেন। আমীন)


রোজা ইফতার

মন্তব্য করুন-

বাংলাদেশর সকল জেলায় জেলা প্রতিনিধি, উপজেলা প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি পদে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহী প্রার্থীগণ নিন্মোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।

নাম: আহসান হাবিব সোহেল
মোবাইল: ০১৭১২২৩১৩৯০
ইমেইল: doinikvoreraloi@gmail.com