এখানে আপনার পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন দিন।

ঢাকা ১৮ এপ্রিল ২০২৪ বৃহস্পতিবার

ব্রেকিং

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি: বাংলাদেশর সকল জেলায় জেলা প্রতিনিধি, উপজেলা প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি পদে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহী প্রার্থীগণ নিউজ সাইটের যোগাযোগ অংশে প্রদত্ত ঠিকানায় (ফোন, ইমেইল) যোগাযোগ করুন।

মোঃ মাসুদ আলম, রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :

প্রকাশিত: ২৩ আগস্ট ২০২১, ১৬:৪৪

আপডেট: ২৩ আগস্ট ২০২১, ১৬:৪৪

৪৪ ১৩৯৪

শেয়ার:

নৈতিক মূল্যবোধ অবক্ষয় রোধে আমাদের করনীয়

অন্তহীন সমস্যায় জর্জরিত আজকের বিশ্ব, মানবতা আজ বিপর্যস্ত। পৃথিবীর সর্বত্রই বিরাজ করছে অশান্তি, অরাজকতা, জুলুম-শোষণে নিষ্পেষিত হচ্ছে আজ বিশ্বমানবতা। চারিত্রিক চরম বিপর্যয় ও মূল্যবোধের অবক্ষয় আজ মানবজীবনকে কুরে কুরে খাচ্ছে। চতুর্দিকে চলছে ব্যক্তিগত, জাতিগত প্রাধান্যের তীব্র প্রতিযোগিতা। ফলে যুদ্ধ-সংঘর্ষ, প্রতিশোধ স্পৃহা আজ চরম আকার ধারণ করেছে।

News

বর্তমানে সংবাদ পত্রের পাতা খুললেই দেখা যায় দূর্নীতি, চাঁদাবাজি,  অপহরণ, খুন, ধর্ষণ। এগুলো যেন আজ সাধারণ ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা থেকে বিশ্বমানবতাকে বাঁচানোর একমাত্র পথ হচ্ছে, আল-কুরআনে নির্দেশিত পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। আল-কুরআনের আলোকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে গঠনের মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা।


নৈতিক মূল্যবোধ, প্রজ্ঞা ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মানবতাবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালোবাসা ও সহযোগিতার আদর্শ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসারিত হলে হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ ও সংকীর্ণতা কমে আসবে।  নৈতিক বিপর্যয় ও অবক্ষয় রোধে আমাদের করণীয় দিকগুলো তুলে ধরা হল।

সকল অবস্থায় আল্লাহর গোলামি করাঃ
আল্লাহ তা‘আলা এই পৃথিবীর মানুষ এবং জিনকে শুধুমাত্র তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন “আমি মানুষ এবং জ্বীনকে একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি।” (সূরা যারিয়াত: ৫৬) মানুষ আল্লাহর ইবাদত করলে পৃথিবীতে যেমন শান্তি পাবে এবং পরকালীন জীবনেও মুক্তি পাবে। আল্লাহ তা‘আলা হযরত আদম (আ) কে উদ্দেশ্য করে বলেন,“অতঃপর যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে কোন হিদায়াত আসবে, তখন যারা আমার হিদায়াত অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা আল বাকারা: ৩৮)

অমানবিকতা, পাশবিকতা, নৃশংসতাসহ সকল প্রকার অন্যায়-অপকর্মের বিরুদ্ধে এক মহৌষধ হলো আল্লাহর ইবাদত। বলা হয়ে থাকে, এটি হলো জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রতিষেধক ও চিকিৎসা। ইবাদত মানুষকে মুত্তাকি ও সংযমী বানায়। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  “হে মানুষ, তোমরাl তোমাদের রবের ইবাদত কর, যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর।” (সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২১)

ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলাঃ
সমাজ ও সভ্যতার নৈতিক অবক্ষয় রোধের অন্যতম উপাদান হচ্ছে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা। কেননা এটা যে কোন সমাজ ও সভ্যতার ভিত্তি এবং রাষ্ট্রীয় সুদৃঢ় অবকাঠামো বিনির্মাণের অন্যতম সোপান।  পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বার বার অপরাধমূলক কাজের প্রতি ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। আর ভালো ও পূর্ণ কাজের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না।” (সূরা মায়েদা-২) কাজেই মানুষ যদি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলে তাহলে সেখানে কোন অসঙ্গতি থাকবে না, মানুষে মানুষে কোন বিভেদ থাকবে না, একজন আরেকজনের অধিকার হরণ করবে না।

সর্বাবস্থায় তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করাঃ
তাকওয়া শব্দের অর্থ আল্লাহভীতি, পরহেজগারি, আত্মশুদ্ধি, পরিশুদ্ধি, বিরত থাকা এবং নিজেকে সব রকম বিপদ ও অকল্যাণ থেকে রক্ষা করা। ইসলামী  শরিয়াতের পরিভাষায় মহামহীয়ান আল্লাহর ভয়ে সব রকম অন্যায়, অনাচার, পাপাচার ঘৃণাভরে বর্জন করে আল-কুরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত পূত-পবিত্র জীবন যাপন করাকে তাকওয়া বলা হয়। তাকওয়া মানুষের সঠিক রাস্তার সন্ধান দেয় এবং সকল কাজকে সহজ করে দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন।” (সূরা আত-তালাক: ২) অন্যত্র আল্লাহ বলেন, নৈতিক অবক্ষয় থেকে সমাজের মানুষকে বাঁচাবার জন্য আমাদেরকে সর্বাবস্থায় তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতে হবে। 

চরিত্রিক মাধুর্যতাঃ
চরিত্র মানুষের অমূল্য সম্পদ, চরিত্রের মাধ্যমেই মানুষের মর্যাদা ফুটে ওঠে অথচ আজকের মানুষ পার্থিব স্বার্থে তাদের চরিত্র বিকিয়ে দিয়েছে। রাসূল (সা) নৈতিক চরিত্র গঠন সম্পর্কে বলেন, “মু’মিনদের মধ্যে সর্বাধিক পূর্ণ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যার নৈতিক চরিত্র তাদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম। আর যে তার স্ত্রীর কাছে ভালো সে তোমাদের মধ্যে উত্তম।” (সূনান আত-তিরমিযি)। ইংরেজিতে একটি কথা আছে "Money is lost nothing lost, health is lost something lost,but character  lost is everything  lost".

 মানুষকে নৈতিক চরিত্রের গুণে গুণান্বিত হতে হবে। তাহলেই নৈতিক অবক্ষয় রোধ করে একটি সুন্দর সমাজ গঠন করা সম্ভব।

আখিরাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া: নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে হলে আখিরাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যারা আখিরাত পরিপন্থী কাজ করবে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন " পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্হায়ী "(সুরা আলা -১৭)।রসূল( স) বলেন " দুনিয়া আখিরাতের শস্যক্ষেত্র"।
ইংরেজিতে একটি কথা আছে Earthly happiness is momentary. অর্থ:পার্থিব সুখ ক্ষণস্থায়ী। 

রাসূল (সা) এর আদর্শ গ্রহণ করা:
রাসূল (সা) এর আদর্শ অনুসরণের মাধ্যমে পৃথিবীতে মানবিক মূল্যবোধ পূর্ণমাত্রায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আল্লাহ তাআলা “অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূল(স) এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব: ২১)। 

একটি জাতিকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে ফিরিয়ে উন্নতির উচ্চ শিখরে আরোহণ করাতে হলে তার পূর্বশর্ত হিসেবে যে জিনিসটি প্রয়োজন, তা হলো সমাজের তথা ঐ জাতির লোকদের কুরআন ও সুন্নাহ তথা নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া। রসূল (স) এর জীবনী থেকে এ শিক্ষা লাভ করা যায়। 

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ:
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা, একটি সংস্কৃতি ও সভ্যতা। এ সভ্যতা বিকাশের মাধ্যমে সমাজ থেকে সকল প্রকার অন্যায়-অপকর্ম ও পাপাচার দূর করা সম্ভব। ইসলামের এই শিক্ষা ও আদর্শিক জ্ঞান চর্চার অভাবেই মানবতার মান-সম্মান আজ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। মানবতার এই নৈতিক বিপর্যয় রোধের জন্য প্রয়োজন সমাজ উপযোগী ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের।Stanley Hull  বলেন "If you teach your children the three R's (Reading, Writing and Arithmetic) and leave the fourth R(Religion), you will get a fifth 'R'(Rascality). 

বিবেকসম্পন্ন মানুষ তৈরি করা:
আল্লাহ তাআলা প্রত্যেকটা মানুষকে বিবেক ও বুদ্ধি দিয়েছেন। যাতে মানুষ সে বিবেককে কাজে লাগিয়ে সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখে। বিবেকহীন মানুষ পশুর সমতুল্য। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন,  “নিশ্চয় আল্লাহর নিকট নিকৃষ্টতম বিচরণশীল প্রাণী হচ্ছে বধির, বোবা, যারা তাদের বিবেককে কাজে লাগায় না।” (সূরা আনফাল: ২২) তাই বিবেককে কাজে লাগিয়ে সমাজের মানুষকে ‘বাস্তবভিত্তিক জীবনাচার’ শিক্ষা দেওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মানুষের বিবেক জাগ্রত করার মাধ্যমে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয় থেকে মানবতাকে বাচানো সম্ভব।

সার্বজনীন জীবনদর্শন ও বৃহত্তর ঐক্য:
নৈতিক বিপর্যয় রোধের জন্য প্রয়োজন সে সভ্যতার সার্বজনীন জীবনদর্শন ও উদারতার ভিত্তিতে জাতির বৃহত্তর ঐক্য। আদর্শিক  রাষ্ট্রগুলোর সমাজব্যবস্থা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আমাদের এ উপমহাদেশের মধ্যে ভারতবর্ষ মুসলমানরা শাসন করেছিলো ৮০০ বছর। এ সময়ের মধ্যে কোন অমুসলিম লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়নি, বরং হিন্দু-মুসলিম এক সাথে বছরের পর বছর বসবাস করতে পেরেছে। এ সময় মুসলমানদের মধ্যে সার্বজনীন জীবনাদর্শ ও বৃহত্তর ঐক্য ছিল। 

আল-কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণঃ
নৈতিক মূল্যবোধের সংরক্ষণে আল-কুরআনের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের বিকল্প কোন রাস্তা খোলা নেই।  এ সম্পর্কে সম্পর্কে  আল্লাহ তা‘আলা বলেন,  “তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে।” (সূরা আলে ইমরান:) অন্যত্র বলা হয়েছে The Holy Quran is the constitution of human life. 
পরিশেষে  বলা যায় যে,উপরিউক্ত বিষয় গুলো আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেনে চলতে পারলেই নৈতিক অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। 

লেখক :মো:মাসুদ আলম, সাংবাদিক ও পরিচালক দি চাইল্ড কেয়ার একাডেমি। গোদাগাড়ী, রাজশাহী।

সাহিত্য

মন্তব্য করুন-

বাংলাদেশর সকল জেলায় জেলা প্রতিনিধি, উপজেলা প্রতিনিধি, বিশেষ প্রতিনিধি ও বিজ্ঞাপন প্রতিনিধি পদে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আগ্রহী প্রার্থীগণ নিন্মোক্ত ঠিকানায় যোগাযোগ করুন।

নাম: আহসান হাবিব সোহেল
মোবাইল: ০১৭১২২৩১৩৯০
ইমেইল: doinikvoreraloi@gmail.com