করোনা পরিস্থিতিতে ভালো নেই প্রবাসীরা। বিশেষ করে যারা শ্রমিক ভিসায় বিদেশে অবস্থান করছে। অধিকাংশ এখন বেকার সময় কাটাচ্ছেন। অনেকেই তিন বা ছয় মাস ধরে বেতনও পাচ্ছেন না। বাইরে বের হতে না পারায় অনেকে অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন। কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশি শ্রমিকদের অবস্থা অনেকটাই শোচনীয়।
তাদের অভিযোগ, দূতাবাসগুলোতে কোনো মেইল, মেসেজ, ফোন করেও কোনো সাড়া পাচ্ছে না। পাশাপাশি নেই কোনো রকম সাহায্যও। প্রবাসে থাকা এসব মানুষ বেকার সময়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অধিকাংশই পরিবার-পরিজন কীভাবে চলবে সে চিন্তায় উদ্বিগ্ন। বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ২০০ কোটি টাকা প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এই প্রণোদনায় বিদেশফেরতরা সুবিধা পেলেও প্রবাসে থাকা বেকার শ্রমিকরা কোনো সুবিধা পাবে না বলে জানা গেছে।
মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসী শ্রমিকরাই বেশি বিপাকে পড়েছেন বলে জানা গেছে। তারা জানিয়েছেন, সৌদি ও মধ্যপ্রাচ্যের অধিকাংশ দেশে থাকা শ্রমিকরা ঘরে বসে বেকার সময় কাটাচ্ছেন। কারখানাই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে তারা যে বেতন পেতেন অনেকেই তা পাচ্ছেন না। পরিবারের জন্য দেশেও টাকাও পাঠাতে পারছেন না। সমির আলী নামে এক আরব আমিরাত প্রবাসী বলেন, আমরা বেকার।
এক মাস ধরে কাজ নেই বের হতে পারছি না বিধ সমস্যা আমাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করছি।
অন্যদিকে কুয়েতের কুয়েত সিটি থেকে ইসলাম নামে এক প্রবাসী বলেন, দুই মাস ধরে কাজ নেই। বেতনও নেই। খাবার সঙ্কটে পড়েছি আমরা। দূতাবাস যেন আমাদের সাহায্য করে, এটা তুলে ধরুন, প্লিজ।
সৌদি প্রবাসী এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমাদের কোম্পানি বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এখন আমরা ঘরের মধ্যে বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছি। আমাদের কাছে টাকা নেই, খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে আছি। টাকা না পাওয়ায় দেশে থাকা ছেলে মেয়ে ও মা-বাবাও খুব কষ্টে আছেন। তাদের টাকা দিতে পারিনি লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছি না। আপনাদের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের পরিবারের জন্য কিছু করেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনা সুদে ঋণ দেন না হলে আমাদের জন্য একটা কিছু করেন প্লিজ। তবে গত শনিবার
মধ্যপ্রাচ্যের মতোই করোনায় বেশি বিপদে পড়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসী শ্রমিকরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, গত ৬ মাস ধরে (কোম্পানির নাম-ইকমাস জায়া এসডিএন বিএইটডি) বেতন পাচ্ছি না। কোম্পানিতে কথা বলার জন্য দূতাবাসে ফোন ও অনেক যোগাযোগ করেছি; কিন্তু আমাদের কোনো সাহায্য করা হচ্ছে না। আমরা বেঁচে আছি, কি মরে গেছি তারও খোঁজখবর তারা নেয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ।
মালয়েশিয়া থেকে বলেন, হাইকমিশনার কোনো প্রবাসীকে সহযোগিতা করেন না। অনলাইনে ফরম পূরণ করেও লাভ হয় না। ফোন নম্বরে ফোন দিলেও তারা ধরে না।
বলেন, এখানে অনেক প্রবাসী না খেয়ে থাকে। তারা লজ্জায় কাউকে বলতেও পারে না। আমরা প্রবাসীরা কিছু মানুষকে সাহায্য করছি; কিন্তু সরকার তো নজর দিচ্ছে না। অধিকাংশ শ্রমিকই বেকার। তারা মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে কোনো ত্রাণ পাচ্ছে না। বিষয়টি সরকার যেন গুরুত্বের সঙ্গে নেয় সে অনুরোধ করছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, মালয়েশিয়া সরকার তাদের নাগরিকদের খাবার দিচ্ছে; কিন্তু আমরা চেয়েও পাচ্ছি না। দূতাবাসও আমাদের কিছু জানাচ্ছে না।
শাহীন আবদুলা মালেক দশ বছর ধরে সৌদি আরব আছেন। এখন বেকার সময় কাটাচ্ছেন । করোনায় তার একটাই চিন্তা, গ্রামের দেশে এনজিও থেকে নেওয়া কিস্তির টাকা তারা কীভাবে পরিশোধ করবেন।
এদিকে ইতালি প্রবাসীরা জানিয়েছেন, দেশটিতে এখনও অবৈধ হাজার হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছে। তারা দেশটিতে করোনা ইস্যুতে কড়া নজরদারির কারণে বাইরেও বের হতে পারছেন না
অন্যদিকে অনেক প্রবাসী দেশে ছুটিতে এসে পড়েছেন নানা রকম সমস্যায় করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বন্ধ থাকার বিপাকে বাংলাদেশী প্রবাস ফেরত ভাইরা কেউর ভিসার মেয়াদ শেষ আবার অনেকের ফেরত টিকেটের সময় নেই ফিরতে হলে গুনতে হবে লক্ষ টাকা আবার মরার উপর করা মধ্যপ্রাচের সবকটি দেশেই ঘোষণা করছে ভ্যাকসিন গ্রহণ ছাড়া প্রবেশ করতে পারবেনা। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত এই দুই টি দেশেই ঘোষণা দিয়েছে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন গ্রহন করেছে তারা একমাত্র প্রবেশ অধিকার মিলবে ।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, যেসব প্রবাসী দেশে চলে এসেছে বা আসছে, তাদের জন্য সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে করোনায় বেকার শ্রমিকদের জন্য কিছু করা হবে কি না সে বিষয়ে মন্ত্রী স্পষ্ট করে কিছুই জানাননি। ফলে প্রবাসে থাকা শ্রমিকরা বেশ উদ্বিগ্ন। এখন তাদের জন্য সরকার কী সিদ্ধান্ত নেবে তারই অপেক্ষায়