আপনার জন্য আমি সব করতে পারি। একবার পরীক্ষা নিয়ে দেখেন না। "
*" *"*"*"মাহমুদ*"*"*"*"*"
@@@@@@@@@@@@
গম্ভীর হয়ে আনিকার ছোট বোন কথা টা বললো। প্রেমিকার চেয়ে প্রেমিকার ছোট বোন আমার জন্য নিরন্তর পাগল।
" দুলাভাইয়ের জন্য এতো কিছু করতে পারবে শুনে ভালো লাগলো। "
" আপনি কিন্তু বুঝে ও না বুঝার ভান করেন। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনার জন্য সব সব সব করতে পারি। বড় আপুর সাথে আপনি ব্রেকাপ করে ফেলেন। "
মেয়েটার বয়স খুব বেশি হলে বারো কী তেরো হবে। সবে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণীতে উঠেছে। এরই মাঝে মাথার মধ্যে প্রেমের ভূত ঢুকেছে। শহুরে বালিকারা মনে হয় এমনি হয়। বুঝানোর জন্য বললাম, তোমার বড় আপুকে আমি ভালোবাসি জানো না? আর তোমার বড় আপু ও যে আমাকে কতটুকু ভালোবাসে তা ও তো তুমি জানো। তাহলে মাঝখান থেকে তুমি কেনো আমাদের মাঝে দেয়াল হচ্ছো?
সে আমার কথা শুনলোই না। ভেংচি দিয়ে বললো, ভালোবাসে না ছাই। আপনার জন্য কী করে শুনি? সময় করে তিন বেলা শুভ সকাল, শুভ দুপুর আর শুভ রাত্রি ছাড়া আপনাকে আর কী দিতে পারে? আমি আপনাকে প্রত্যেকদিন সকালে গান শুনাবো, দুপুরে রোমান্টিক রোমান্টিক ম্যাসেজ পাঠাবো আর রাতে কবিতা আবৃতি করে শুনাবো। আপু কী তা পারে?
আমি মুচকি হেসে বললাম, ওইটুকুই আমার হয়ে ওপারে চলে যায়। তাছাড়া এসব পারে না বলেই তো তোমার আপুকে আমার এত্তগুলা ভালো লাগে।
" ঢং, আজকালকার দিনে আপুর মতো মেয়ের সাথে কেউ প্রেম করে? আপনি এতো সুন্দর করে হাসেন, এই কথা আপু কী আপনাকে কোনোদিন বলেছে? তাছাড়া বলেন তো আমি কী আপুর চাইতে কম সুন্দরী? "
বয়স হাঁটুর নীচে পরে থাকলে ও মেয়ে টা কথা বলে মাথার সমান মানুষের মতো। বললাম, তুমি ও সুন্দর। তাছাড়া দুনিয়ার সব মেয়েই কোনো না কোনো ছেলের কাছে দুনিয়ার সব চেয়ে সুন্দরী। আমার চোখে তোমার বোন। এমনিতে তোমার বোনকে আমি এমনিতেই ভালোবাসি। আরো স্পষ্টভাবে বললে, হুদাই ভালোবাসি।
" আচ্ছা আপনি এমন বোকা কেনো? আমার সাথে প্রেম করলে আপনাকে কমপক্ষে দশ বছরের ভিতরে বিয়ের চাপ নিতে হবে না। চুটিয়ে শুধু প্রেম করবেন। আপুর তো বিয়ের বয়স হয়ে গেছে না? কদিন পরেই আব্বু বিয়ে দিয়ে দিবে তখন? ভেবে দেখুন। "
আমি আবারো হেসে বললাম, দেবদাস হব।
সে ভেংচি দিয়ে বললো, জানেন আপু না বুড়ি হাতি হয়েছে তবু ও ভাত পর্যন্ত রান্না করতে পারে না। আর অন্য রান্নার কথা বাদ দিলাম। আমি খিচুড়ি রান্না করতে পারি, বিরিয়ানি পারি, নুডুলস পারি বলতে গেলে অ্যা টু যেট সব পারি। প্রত্যেকদিন আপনাকে বিয়ের পরে মজাদার রান্না করে খাওয়াবো। প্লীজ রাজি হয়ে যান না।
আমার সোজাসাপটা উত্তর, তুমি চাইলে বিয়ের আগেই খাওয়াতে পারো। একমাত্র দুলাভাই বলে কথা।
" ধুর, আপনাকে রামায়ণ শুনিয়ে কোনো লাভ নেই বুঝছি। শুনুন আপুর স্বামী না হয়ে যদি আমার স্বামী হোন তাহলে জামাই আদর পাবেন বেশি। কারণ আপনি হবেন বাড়ির ছোট মেয়ের ছোট জামাই। সবকিছু একটু বেশি বেশি পাবেন। তাছাড়া আমি আপনার কখনো অবাধ্য হবো না। যা বলবেন ঠিক তাই করবো। রাগ করলে রাগ ভাঙাবো, অভিমান করলে অভিমান ভাঙাবো আর ঝগড়ার পরে আমি আগে আপনার সাথে কথা বলবো। এমনকি বিয়ের পরে হানিমুনে কোথায় যাবো সেটা ও আপনি ঠিক করবেন। প্লীজ রাজি হোন না, হলে কী হয়? কতো মানুষ ব্রেকাপ করে আরেক টা প্রেম করে না? "
আল্লাহ্!
মেয়ে টা কতদূর ভেবে ফেলেছে। আনিকা আমার প্রেমিকা সত্ত্বেও এতটুকু কোনোদিন ভাবেনি। নিজের অজান্তে লম্বা এক দীর্ঘশ্বাস টেনে বললাম, তুমি মেয়ে টা লক্ষ্মী। কিন্তু কী করবো বলো? মন তো আর হাজার টা মেয়েকে ভালোবাসতে পারে না।
" আও, এর আগে কতজন আমাকে লক্ষ্মী বলেছে। কিন্তু আপনি লক্ষ্মী বলার বলে পরে মনে হলো আমি সমুদ্রের ঠাণ্ডা বাতাসে ভাসছি। আর হাজার টা মেয়েকে মন ভালোবাসবে কেনো? আপনার মনকে বলুন শুধু আমাকে ভালোবাসতে। কারণ আমিই একমাত্র আপনার মনকে আদরযত্ন করে লালনপালন করবো, প্লীইইজ। "
" আজব মেয়ে তুমি! নিজের বোনের সাথে প্রেম করি জেনে ও নিজেই প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছো! "
" কী করবো বলেন? আমার চোখে আপনাকে ছাড়া আর কোনো ছেলেকে যে ছেলে মনে হয় না। সবাইকেই চাচা চাচা লাগে। আর একটা কথা বললে তো বলবেন সিনেমার ডায়লগ দিচ্ছি, আমি না আপনাকে জেগে থাকলে ও দেখি। আর ঘুমালে তো এক মুহূর্তের জন্য ও দূরে যান না আমার থেকে। "
মেয়েটার কথা শুনে আমার মাথা ব্যথা শুরু করে দিলো। একটা মেয়ে এতো গুছিয়ে প্রেমের প্রস্তাব কীভাবে দিতে পারে? নাহ একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।
" ইরা "
" বলেন না "
" আমি যা বলবো তা ই করতে পারবে?"
" একবার বলেই দেখেন না "
ইরার মুখে এক অমলিন হাসি। মেয়েটাকে হাসলে খারাপ লাগে না। আনিকার ছোট বোন বলে কথা। ভাবছি মেয়েদের কী বললে জীবনে ও করবে না? মেকাপ? পানি ছাড়া যেমন জীবন অচল তেমনি মেকাপ ছাড়া মেয়েরা অচল। দেখি কী হয়।
" কখনো মুখে মেকাপ করতে পারবে না। হালকা লিপস্টিক পর্যন্ত না। চোখে কাজল পর্যন্ত না। "
" আমি এমনিতেই যথেষ্ট সুন্দরী। মেকাপ করি না। মাঝে মাঝে লিপস্টিক আর কাজল দিতাম কিন্তু আজকে থেকে আর দিবো না। বাড়িতে গিয়ে আপুর মেকাপ বাক্স সহ সব ফেলে দিবো। আরো কিছু? বলেন না। "
মনে মনে ভাবছি, এটা মেয়ে না বিদ্যুৎ? রকেটের চেয়ে ও তাড়াতাড়ি চলে!
" চুল কাটতে পারবে না। "
" এহ, এটা না বললে ও পারতেন। কারণ আমি জানি আপনার লম্বা চুল পছন্দ। আপুকে কতবার বলতে শুনছি। তারপর বলেন। "
ধ্যাত্তেরি! আর কী বলবো? বলবো না কী পুকুরে সারারাত ডুবে থাকতে? তা ও শীতের দিনে? না না, মেয়ে টা তাহলে মরেই যাবে। আচ্ছা ওর আব্বুকে যদি বলি থাপ্পড় দিতে? তাহলে ও পারবে না একদম। কারণ ওর বাবাকে ও তেলেবেগুনে ভয় পায়।
ধুর, কী ভাবছি আমি! আমার ভাবনাগুলোতে সবসময় অপরাধ অপরাধ ছায়া থাকে।
" কী ভাবছেন, আর কিছু করতে হবে না? আমি কিন্তু আপনার দেয়া সব শর্ত অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাবো। শরীরের শেষ বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত। "
ভাবছি আমি বলেই দিবো যে দশ তলা দালান থেকে লাফ দিতে। এ কী! মেয়ে টা তো আনিকার ই বোন। আনিকা তাহলে আমাকে এটেম টু মার্ডার অপরাধে জেলে ঢুকিয়ে দিবে। এর মাঝে ইরার মুখে মুচকি হাসি।
" আচ্ছা তাহলে আমি স্কুলে গেলাম। কালকে কথা হবে। আর শর্তগুলো পালন করে দেখানোর পরে কিন্তু আপনি আমার। কথা টা মনে থাকে যেন।
অতঃপর