নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের সাদিশপুর মৌজায় আনন্দমার্গ শিক্ষা, ত্রাণ ও জনকল্যাণ ট্রাস্টের জমিতে উপজেলা প্রশাসন দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন উক্ত ট্রাস্টের কর্তৃপক্ষ।
আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন বলে তারা জানান। আনন্দমার্গ শিক্ষা, ত্রাণ ও জনকল্যাণ ট্রাস্টের জমিতে দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ বন্ধের দাবীতে ২৭/০২/২০২২ ইং তারিখে সাংবাদিক সংস্থা বদলগাছী’র কার্যালয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানের সেক্রেটারী আচার্য্য ব্রজেশ্বরানন্দ অবধুত সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে তার লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ২০০৩ সালে সাদিশপুর গ্রামের শিক্ষানুরাগী শ্রী প্রভাস চন্দ দাস আনন্দমার্গ শিক্ষা, ত্রাণ ও জনকল্যাণ ট্রাষ্টটি প্রতিষ্ঠা করেন। ট্রাস্ট দলিল নং-৬৪৪৩/২০০৩। তিনি পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ১৭.২৬ একর জমি উক্ত ট্রাষ্টের নামে দান করেন। ট্রাস্টের আওতায় এলাকাবাসীর কল্যানার্থে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি এতিমখানা, দাতব্য চিকিৎসালয় ও একটি ধ্যান মন্দির প্রতিষ্ঠা করে ধর্মীয় ও সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ঐ প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৬ জন শিক্ষক ও ৭৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের বেতন-ভাতাদি ট্রাস্টের জমির আয় থেকে বহন করা হয়। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্তে ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাঃ আলপনা ইয়াসমিন ট্রাস্টের সাদিশপুর মৌজায় এক একর ১৫ শতাংশ জমির উপর দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। সেখানে ২৮টি গৃহ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সেক্রেটারী আরোও বলেন, সাদিশপুর, উত্রাসন ও চকমোহনপুর মৌজার ১৭ একর ২৬ শতাংশ জমির মূল মালিক কৃঞ্চ কুমার দাস। তার দুই ছেলে শ্রী গিরিশ চন্দ্র দাস এবং শ্রী জ্যোতীশ চন্দ্র দাস। জ্যোতীশ চন্দ্র দাসের দুই ছেলে শ্রী মনিন্দ্রনাথ দাস এবং শ্রী ফনিন্দ্রনাথ দাস তারা ৭১ সালে ভারতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। জ্যোতীশ চন্দ্র দাসের মৃত্যুর পর গিরিশ চন্দ্র দাসের ছেলে শ্রী প্রভাশ চন্দ্র দাস উক্ত সম্পত্তির মালিক হন। পৈত্রিক সূত্রে শ্রী প্রভাশ চন্দ দাস উল্লেখিত জমির মালিক এবং অবিবাহিত। প্রভাশ চন্দ্র দাস উক্ত ট্রাস্টের নামে জমিগুলো দান করেন।
আইনের বিধান মতে ২৩/০৩/১৯৭৪ সালে শত্রæ আইন বিলুপ্ত হওয়া সত্তেও ভূমি অফিসের কতিপয় অসাধু ব্যক্তির সমন্বয়ে কিছু পরধনলোভী ব্যক্তি চক্রান্ত করে অর্পিত সম্পত্তি ঘোষণা করে লীজ গ্রহণ করলে সরকারের বিরুদ্ধে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আদেশ হয়। পুনরায় এই সম্পত্তিতে বাটোয়ারা মামলা দায়ের করলে নিম্নে সহকারী জজ আদালতে মামলা খারিজ হয়। এরপর জেলা যুগ্ম জজ আদালতে আপিল করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। কিন্তু যুগ্ম জেলা জজ আদালতের এক বিতর্কিত মন্তব্যকে অবলম্বন করে জেলা প্রশাসক থেকে এই সম্পত্তি খাস করনের নির্দেশ হলে মহামান্য হাইকোর্ট উক্ত জেলা প্রশাসকের নির্দেশ বিতর্কিত মন্তব্যের উপর রুল জারি করেন ও রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত করেন। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের উক্ত স্থগিতাদেশ অমান্য করে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন ধর্মীয় ও ট্রাস্টের জমিতে গৃহ নির্মাণ অব্যাহত রেখেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ট্রাস্টের জমিতে গৃহ নির্মাণ বন্ধ করার জন্য গত ৬ জানুয়ারি ২০২২ইং তারিখে ট্রাষ্টের সভাপতি শ্রী সুশীল চন্দ্র মন্ডল আবেদন করলে নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিন কাগজ পত্রসহ তাঁর কার্যালয়ে আসতে বলেন। সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নির্বাহী অফিসার আলপনা ইয়াসমিনকে তাঁর কার্যালয়ে দেখালে তাদেরকে বলেন জেলা প্রশাসকের আদেশে জমিগুলো খাস করা হয়েছে। তাই সেই জমিতে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারদের পুনর্বাসন করার জন্য ২৮টি গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে এবং ডিসির আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের আদেশ না আনা পর্যন্ত গৃহ নির্মাণ কাজ চলবে। ইউএনও আলপনা ইয়াসমিন আরও বলেন, জমিগুলোতে আনন্দমার্গ শিক্ষা, ত্রাণ ও জনকল্যাণ ট্রাষ্ট নাই। তারা জাল দলিল তৈরী করে তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জমি বলে দাবি করছে। প্রেক্ষিতে ০৯/০২/২০২২ ইং তারিখে নির্মাণ কাজ বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসক নওগাঁ বরাবর আবেদন করেন উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি। তারপরও গৃহ নির্মাণ কাজ বন্ধ করা হয় নি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও বেআইনিভাবে চালিয়ে যাওয়া নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি করেছেন ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ। তাই ধর্মীয় জমিতে দুর্যোগ সহনীয় গৃহ নির্মাণ বন্ধ করার জন্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ট্রাস্টের সদস্য আচার্য বিশ বিজয়নন্দ অবধুত, দীপক কুমার বর্মন, মনমোহন সহ উপজেলায় কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।