২০১০ সাল থেকে প্রতিবছর ১ জানুয়ারি সারাদেশে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেয়া হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এবার উৎসব ছাড়াই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের হাতে বিনামূল্যের পাঠ্যবই তুলে দিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।
আজ ১ জানুয়ারি শনিবার সকাল থেকে বরগুনার বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এই বই দেয়া হয়েছে। এই মহামারীকালেও নতুন বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া স্কুলে দীর্ঘদিন পর সহপাঠীদের দেখা পেয়ে আনন্দিত তারা। করোনার সংক্রমণের কারণে এবার একদিনেই সব শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে না। কয়েকদিন ধরে ভাগ ভাগ করে এ বই দেয়া হচ্ছে।
সরকারি সিদ্ধান্ত হলো, করোনার কারণে এবার একেকটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের তিন দিন করে বই দেয়া হবে। এভাবে করে ১২দিন পর্যন্ত বই বিতরণ করা হবে।
অন্যদিকে, যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম, সেখানে একদিনেই বই দেয়া হচ্ছে। আর যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী তুলনামূলক বেশি, সেখানে তিন দিন বই দেয়া হবে।
আজ প্রথম দিনে বরগুনা জিলা স্কুল, বরগুনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বরগুনা দারুল উলুম নেসারিয়া কামিল (এম.এ) মডেল মাদ্রাসা, নাপিত খালি পঞ্চগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আজ শনিবার বছরের প্রথম দিনে বেলা ১১টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের হাতে সরকারের বিনামূল্যের বই তুলে দিয়ে বই উৎসব পালন করা হয়েছে।
এদিকে নতুন বছর, নতুন ক্লাসে, নতুন বই হাতে পাওয়ার পর আনন্দিত ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা বলছে, বছরের প্রথমদিন বই হাতে পাওয়ার কারণে সিলেবাসটা দ্রুত শেষ করতে পারবে। ফলাফলও ভালো হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবক রেজাউল করিম পান্না জানান, দীর্ঘদিন পর স্কুলে এসে বছরের প্রথম দিনেই আমাকে সাথে করে নিয়ে নতুন বই হাতে পেয়ে আমার মেয়ে খুবই খুশি হয়েছে। এবং বিনামূল্যে বই বিতরণ করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।
বরগুনা বরগুনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আজহারুল হক বলেন, আজ তিনটি ষষ্ঠ শ্রেনীর প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ ছাত্রীদের মধ্যে বই বিতরণ করা হয়েছে। এবং প্রতিবছর এই বিদ্যালয়ের ফলাফলের মান অন্যান্য বিদ্যালয় থেকে এগিয়ে। তবে আমাদের বিদ্যালয়ে শিক্ষক এর সংখ্যা খুবই কম! সরকার যদি শিক্ষক নিয়োগ দেয় তাহলে হয়তো শিক্ষার্থীদেরকে আমরা শিক্ষার মান আরো ভালো দিতে পারবো।
বরগুনা জিলা স্কুল এর প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম বলেন, বছরের প্রথম দিনে নতুন বই বাচ্চাদের দিতেপেরেও আমরা আনন্দিত। কেননা আমাদের বিদ্যালয়ের ছেলেরা বিনা মূল্যে বই নিয়ে লেখা পড়া করে ভালো রেজাল্ট করে বিদ্যালয়ের সুনাম অর্জন করলে আমারা শিক্ষকরাই গর্বিত হই। শিক্ষার্থীরাও জীবনে সফল হতে পারে।
মুহাম্মাদ মামুন অর-রসিদ বলেন, নতুন বছরে নতুন নতুন শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় ও নতুন বই বিতরণ এটা আমাদের শিক্ষকদের ও প্রতিষ্ঠানের জন্য আনন্দময়। এই মাদ্রাসায় দ্বীনি শিক্ষা নিয়ে স্টুডেন্টরা প্রতি বছর এখান থেকে রেজাল্টে এর দিক থেকে জেলার মধ্যে উত্তির্ন হয়ে থাকে।
বরগুনা দারুল উলুম নেসারিয়া কমিল এমএ মডেল মাদ্রাসাটি ১৯৭০ইং সালে প্রতিষ্ঠাতা করেন আওয়ামী লীগ এর সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব আঃ লতিফ মাষ্টার। সেই থেকে তিলে তিলে মাদ্রাসাটি একটি মডেল মাদ্রাসায় রুপান্তরিত হয়েছে। এবং ১আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ১২বছর এপ্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন এবং বর্তমানে জেলা প্রশাসক সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এবং বর্তমানে শিশু শ্রেণী থেকে অনার্স সহ কামিলএমএ পর্যন্ত ২০০০ইস্টুডেন্ট অধ্যায়ন রত আছে। আমরা এ সুনাম ধরে রাখতে কঠোর পরিশ্রম অব্যাহত রাখবো! ইনশাআল্লাহ।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জসিম উদ্দিন জানান, নতুন বছরে ছাত্র-ছাত্রীরা নতুন বই পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত। শিক্ষক-অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিদিন দুটি করে নতুন ওয়ার্ড শিখতে পারে তার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। সেই সাথে শিক্ষার্থীরা যেন নতুন বইগুলো বাড়িতে পড়ে তার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন। শিক্ষার্থীদের বলেন, জীবনে মানুষ হতে চাইলে লেখাপড়ার কোনো বিকল্প নেই। তাই এখন থেকেই সবাইকে পড়াশুনায় মনোযোগী হতে হবে।